চলছে ফাল্গুন মাস। ভোররাতে অল্প শীত অনুভব হলেও দিনভর কিন্তু বেশ গরমের তেজ থাকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, গ্রীষ্মকাল আসছে। তবে এখনই যেহেতু গরমের আঁচ অনুভব করা যায়, তাই ভোগান্তি কিন্তু বাড়া শুরু করেছে। এরইমধ্যে অনেকেই ঘাম ঝরা ও ক্লান্তি দূর রোধে পকেটে স্যালাইন রাখছেন। কেউ কেউ আবার গরম যেন কম লাগে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এদিকে গরমে সুস্থ থাকতে কেউ কেউ আবার খাদ্য তালিকায় দৃষ্টি রাখেন। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে টক দই। দই সাধারণত উপকারী হলেও মাঝে মধ্যেই দেখা যায়, এর স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে প্রশ্ন করেন অনেকে। টক দই কতটা স্বাস্থ্যকর, কখন খেলে উপকার মিলবে―তা নিয়েই ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
পুষ্টির উৎস: টক দই হচ্ছে প্রোবায়োটিক খাবার। শরীর সুস্থ রাখার জন্য এ দইয়ের বিকল্প নেই। এতে প্রোটিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, রিবোফ্লাবিন, ফসফরাস, জিঙ্ক, সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। আর সবগুলো উপাদানই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: টক দইয়ে যেহেতু প্রোটিন রয়েছে, তাই এটি খাওয়ার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পেট ভর্তি থাকলে শরীরে কর্টিসেল হরমোন কম পরিমাণ নির্গত হয়। ফলে স্ট্রেস কমে এবং স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ দই খাওয়ার ফলে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে। অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয়। টক দইয়ে বির্দ্যমান ফার্মেন্টেড এনজাইম হজমজনিত জটিলতা দূর করে। আর এই প্রোবায়োটিক খাবার পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ লিভার সুস্থ রাখে।
ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে: টক দইয়ে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ কমায়। নিয়মিত টক দই খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো এবং পেটের যেকোনো সমস্যা সহজেই দূর হয়।
কখন দই খাওয়া উচিত: অনেকেই আছেন যারা দুধ সহ্য করতে পারেন না, যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট তারা টক দই খেতে পারেন। এ দই অনেক বেশি সহজপাচ্য। কিন্তু কখন দই খেতে হবে, তা নিয়েই যত সন্দেহ। অনেকেই মনে করেন সকালে টক দই খাওয়া ভালো। কারও ধারণা, বিকেলের পর খেলেও কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সকালে হালকা খাবার বা নাশতার পর টক দই খাওয়া ভালো। এতে ঠান্ডা থাকে পেট।
বিকেলে টক দই খাবেন, না খাবেন না: অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সহযোগিতা করে টক দই। এতে হিস্টামিন নামক উপাদান রয়েছে, যা শরীরে মিউকাস গঠন করে। এ জন্য বিকেলের পর টক দই খেলে সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঠান্ডার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। পুষ্টিবিদের মতে, টক দিইয়ে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। এ জন্য বিকেলের পর টক দই খেলে হজম করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় পরিপাকতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। আবার গাঁটের ব্যথা বৃদ্ধিসহ শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।
এদিকে পুষ্টিবিদ পল্লবীর সঙ্গে একমত নন মেডিসিন চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল। তিনি বলেন, দিনের যেকোনো সময় টক দই খাওয়া যায়। কেউ বিকেলের পর, এমনকী রাতেও টক দই খেলে সমস্যা নেই। এটি যেহেতু প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, তাই যখনই খাওয়া হোক না কেন উপকার মিলবে।
খুলনা গেজেট/এনএম